প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৭ এএম

অনলাইন সংস্করণ

এ সম্পর্কিত আরও খবর

উপেক্ষিত এক মহানায়ক

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৭ এএম

অনলাইন সংস্করণ

👁 4 views

উপেক্ষিত এক মহানায়ক

মহান স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মদিন আজ। জিয়াউর রহমানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়নে তার অবদান অনস্বীকার্য। দেশ ও জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে এই মহান নেতা দুবার ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে এসেছেন। প্রথমবার একাত্তরে, দ্বিতীয়বার পঁচাত্তরে। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন নির্বিচারে গণহত্যা করে, আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে যখন কোনো নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন ২৬ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে আসে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা। তার এই ঘোষণা জাতিকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে বিশেষভাবে উৎসাহিত করে, দিশাহীন জাতি খুঁজে পায় মুক্তির দিশা। জিয়াউর রহমান কারও নির্দেশ ছাড়াই ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহ করেন। তিনি তার অধিনায়ক জেনারেল জানজুয়াকে গ্রেপ্তার ও হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ করেন।

আবার পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট-পরবর্তী অস্থির সময়ে ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের পর আবার ইথার থেকে থেকে ভেসে আসে জিয়াউর রহমানের কণ্ঠস্বর। পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী এক ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল। এদিন সিপাহি-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ক্যান্টনমেন্টের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে আনেন স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে।

পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর ৩, ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ছিল কার্যত সরকারবিহীন। এ সময় কুচক্রীরা সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাসায় বন্দি করে রাখে; কিন্তু ৬ নভেম্বর রাতে সংঘটিত সিপাহি-জনতার মিলিত বিপ্লবে নস্যাৎ হয়ে যায় সব ষড়যন্ত্র। চার দিনের দুঃস্বপ্নের প্রহর শেষ হয়। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন জিয়া। রেডিওতে ভেসে আসে তার কণ্ঠ, আমি জিয়া বলছি। তিনি বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম। আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি: বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার এবং অন্যদের অনুরোধে আমাকে সাময়িকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের চিফ মার্শাল ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়েছে। এ দায়িত্ব ইনশাআল্লাহ, আমি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনারা সকলে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন। দেশের সর্বস্থানেÑঅফিস-আদালত, যানবাহন, বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও কলকারখানগুলো পূর্ণভাবে চালু থাকবে। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন। খোদা হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’

এই সংক্ষিপ্ত ভাষণ জনমনে আশার সঞ্চার করে। রাজধানী ঢাকার রাজপথ ওইদিন কাকডাকা ভোরে প্রত্যক্ষ করেছে অনন্য, অতুলনীয় এক দৃশ্য। রাস্তায় রাস্তায় স্বতঃস্ফূর্ত গণমিছিল, সিপাহিদের সঙ্গে জনতার মিলিত উল্লাস, জয়ধ্বনির উল্লাস, আনন্দের কলকল্লোলিনী। কণ্ঠে উচ্চারিত নিনাদ: বাংলাদেশ জিন্দাবাদ অভিন্ন একটি আবেগে, দেশপ্রেমের একাগ্র একটি অনুভূতিতে উদ্বেলিত সমগ্র রাজধানী, নগরীসহ গোটা দেশ। প্রাণের সঙ্গে প্রাণের স্পর্শে একাত্ম হয়েছে সৈনিক এবং জনগণ। যে ঐক্য আকীর্ণ হয়েছিল এতদিন সংশয়ে, তাকে আবার অবিনাশী সত্যে প্রতিষ্ঠিত করল সেই জাগ্রত চেতনা। যার নাম স্বাধীনতা। যার নাম দেশপ্রেম। জাতির ঐক্যবদ্ধ শক্তির এই নবউত্থান, তার বৈপ্লবিক সত্তার এই উদ্বোধন আবার প্রমাণ রাখে, এদেশের মানুষের স্বাধীনতাকে খর্বিত করার সাধ্য নেই কোনো চক্রের, দেশি-বিদেশি কোনো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর। কারও ক্ষমতা নেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার, দুর্বল করার।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments