প্রকাশ : ৮ মার্চ ২০২৫, ৪:৩১ এএম

অনলাইন সংস্করণ

এ সম্পর্কিত আরও খবর

দোয়া ইউনুস’-এর ফজিলত

প্রকাশ : ৮ মার্চ ২০২৫, ৪:৩১ এএম

অনলাইন সংস্করণ

👁 12 views

বিপদ-মসিবতে দোয়া ইউনুস পড়ার উপকারিতা

ইসলামি ধর্মীয় জীবন ও আধ্যাত্মিকতার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে দোয়া। এর মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া হলো ‘দোয়া ইউনুস’। হজরত ইউনুস (আ.)-এর সময়ে তাঁর জীবনে যে বিশেষ ঘটনা ঘটেছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই দোয়া আল্লাহর কাছে খুশি লাভ ও বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হাদিসে ‘দোয়া ইউনুস’-এর ফজিলত ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে, যা মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত।  হজরত ইউনুস (আ.) যখন মাছের পেটের অন্ধকারে বন্দী ছিলেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করেছিলেন:


  “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সাবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ-যালেমিন।”


 (অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তুমি পবিত্র, নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিমদের মধ্যে।)

এই দোয়াটি আল্লাহর কাছে একটি গভীর আত্মসমর্পণ এবং তাওবা ছিল। তাঁর কাছ থেকে এই দোয়া পূর্ণ হৃদয়ে খোদার কাছে তওবা এবং সাহায্য চাওয়ার একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত। এটি আল্লাহর কাছে দয়া ও রহমত প্রাপ্তির একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়।

হাদিসে দোয়া ইউনুস-এর ফজিলত:

হাদিসে এসেছে যে, দোয়া ইউনুস পড়লে মানুষ যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি বা বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পায় এবং আল্লাহর রহমত ও সাহায্য লাভ করে। একে ইসলামের একটি বিশেষ দোয়া হিসেবে গণ্য করা হয়, যার মাধ্যমে জীবনের সমস্যাগুলির সমাধান পাওয়া যায়। যেমন এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

“যে ব্যক্তি ‘দোয়া ইউনুস’ পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দেবেন এবং তাকে শান্তি ও প্রশান্তি প্রদান করবেন।” এছাড়া, হাদিসে আরও উল্লেখ আছে যে, যারা দোয়া ইউনুসের আমল করবে, তারা আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করবে এবং তাদের জীবনে সুখ-শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

সমাজে প্রচলন ও বিতর্ক:

আজকাল, মুসলিম সমাজে ‘দোয়া ইউনুস’ পাঠ করা কিংবা এর খতম করার প্রচলন ব্যাপক। বিশেষ করে বিপদগ্রস্ত বা কোনো সংকটের মধ্যে থাকা মানুষরা এই দোয়া পড়েন, যাতে তারা আল্লাহর সাহায্য লাভ করতে পারেন। সামাজিকভাবে অনেক মানুষ এই দোয়া পড়া ও খতম করার জন্য একে অপরকে উৎসাহিত করেন, যেন তারা আল্লাহর রহমত পায়।

তবে, এই দোয়া নিয়ে কিছু মতবিরোধও রয়েছে। বিশেষত, কিছু আলেম এই ব্যাপারে সতর্ক করেছেন যে, কোনো আমল বা দোয়া সঠিকভাবে পালন করা উচিত এবং তা যেন শিরক বা কোনো ধরনের অমুসলিম বিশ্বাসে না পরিণত হয়। তবে, অধিকাংশ আলেম ও সমাজের অংশবিশেষ এই দোয়া সম্পর্কে একমত যে, এটি আল্লাহর রহমত ও দয়া লাভের একটি উপায় এবং এটি শরিয়তের মধ্যে কোনো অসঙ্গতি সৃষ্টি করে না।

আমির সানআনি বলেন, ‘যদি বলা হয়, এটা তো একটা জিকির, দোয়া নয়, তবে আমরা বলব, এটি এমন একটি জিকির যা দ্বারা দোয়া শুরু করা হয়। এটা পড়ার পর যা ইচ্ছা দুআ করা যাবে।’ (আত-তানবির)

এভাবে প্রথমে দোয়া ইউনুস পাঠ করার পর আল্লাহর কাছে কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য নিয়ে দোজা করলে, আশা করা যায়, মহান দয়ালু দাতা আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন। এ ক্ষেত্রে দোয়া কবুলের শর্তাবলি ও আদব ঠিক থাকতে হবে।এ দোয়ার আমলকারীকে অবশ্য্ হালাল উপার্জন থেকে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করা এবং হালাল অর্থের উপর জীবন যাপন করা।দোয়ার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করা। দোয়া শেষে আবারও দরুদ পাঠ করা ভালো।

  • অন্তরে দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় আস্থা ও মনোভাব অক্ষুণ্ন রাখা।
  • একান্ত বিনয়-নম্রতার সাথে কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বারবার দোয়া করতে থাকা।
  • দোয়া করতে করতে বিরক্ত না হওয়া।
  • দোয়া কবুলের জন্য তাড়াহুড়া না করা।
  • দোয়ার মধ্যে গোনাহের কোনো কিছু না থাকা ইত্যাদি।

দোয়া ইউনুস মানবজীবনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তির এক শক্তিশালী দোয়া হিসেবে পরিগণিত। এটি শুধুমাত্র ইসলামের ধর্মীয় বিশ্বাসেই নয়, মানুষের আত্মিক শান্তি ও আল্লাহর কাছে তাওবা করার একটি পথ হিসেবে সামাজিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব বহন করে। আল্লাহর রহমত লাভের জন্য এই দোয়ার আমল করে আমাদের জীবনে শান্তি, সুখ এবং বিপদ থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। তবে, এই দোয়া পাঠের ক্ষেত্রে আমাদের উচিত সঠিক আমল অনুসরণ করা এবং আল্লাহর প্রতি খোদার আনুগত্য বজায় রাখা।

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments