মাদকের করাল গ্রাসে যখন যুবসমাজ ধ্বংসের পথে, ঠিক তখনই ভয়ঙ্কর ইয়াবা চক্রের বিরুদ্ধে কুয়াকাটা উপকূলে বড় ধরনের অভিযানে নেমে নজির স্থাপন করেছে র্যাব ও কোস্টগার্ডের যৌথ বাহিনী!
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা-সংলগ্ন পশ্চিম সাগর মোহনা ও লেম্বুরবনে পরিচালিত এই বিশেষ অভিযানে অবাক করা কৌশলে পাচার করা ৪ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। ধরা পড়েছে ১৬ কুখ্যাত মাদক পাচারকারী, যারা বছরের পর বছর সমুদ্রপথে ভয়ঙ্কর মাদকের চালান সরবরাহ করে আসছিল। তবে এখনো অধরা চক্রের মূলহোতা, যার খোঁজে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রাতভর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’, ট্রলারের জাল থেকে বনের গহীন—সবখানে ইয়াবার ছড়াছড়ি!
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টা থেকে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ১টা পর্যন্ত টানা অভিযান চালান। সন্দেহজনকভাবে চলাফেরা করা একটি নামবিহীন ট্রলারে হানা দিয়ে দেখা যায়, মাছ ধরার জালের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়েছে ১ লাখ পিস ইয়াবা! আটক করা হয় ট্রলারে থাকা ১৬ জন পাচারকারীকে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়—পাচারকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে!
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয় কুয়াকাটার লেম্বুরবনে। গভীর জঙ্গলের ভেতর পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তিনটি বস্তা, যার প্রতিটিতে গাদাগাদি করে রাখা ১ লাখ করে মোট ৩ লাখ পিস ইয়াবা!
মাদক সাম্রাজ্যের ছায়ায় বড়শক্তির ইঙ্গিত? মূল হোতা কোথায়?
এই বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত—চক্রটি কেবল কয়েকজন চোরাকারবারির ছোটখাটো দল নয়, এর পেছনে রয়েছে এক বিশাল শক্তিশালী সিন্ডিকেট, যারা সমুদ্রপথকে মাদক পাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত করেছে!
যদিও আটক ১৬ জনের বিরুদ্ধে মহিপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে, কিন্তু এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি এই চক্রের গডফাদারকে! কে সেই মূলহোতা? কোথায় তার আস্তানা? কার আশীর্বাদে এত বড় মাদকের চালান নির্বিঘ্নে চলাচল করত?
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তানভীর আজবাল হৃদয় জানিয়েছেন, এই চক্রের শেকড় উপড়ে ফেলার জন্য আরও বড় অভিযান পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সমুদ্রপথে মাদকের থাবা: কখন হবে মুক্তি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্সবাজার, টেকনাফ থেকে শুরু করে কুয়াকাটা উপকূল পর্যন্ত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ক্রমেই ইয়াবা পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে! প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাদক চালান ঢুকছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, ধ্বংস করছে তরুণ প্রজন্মকে।
এত বড় এক অভিযানের পরও রয়ে যাচ্ছে বড় প্রশ্ন—এই চক্রের মূল শিকড় কোথায়? কারা এর পৃষ্ঠপোষক? প্রশাসন কি সত্যিই পুরো নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দিতে পারবে? সময়ই দেবে সেই উত্তর!